কলা খাওয়ার ১৫টি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
কলা অত্যন্ত সুস্বাদু একটি ফল। কলা খেতে পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সবাই কলা খেতে পছন্দ করে। আমরা সবাই কলা খেতে পছন্দ করলেও কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানিনা। তাই আজকে আমরা জানব কলা খাওয়ার কি কি উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে।
কলা এমন একটি ফল যার মধ্যে নানা পুষ্টিগুণ রয়েছে। কিন্তু অনেকেই জানেন না কলার পুষ্টি গুনাগুন সম্পর্কে। তাই আজকে আমরা জানবো কলা খেলে কি কি উপকার পাওয়া যাবে। কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে করুন।
পোষ্ট সূচিপত্র: কলা খাওয়ার ১৫টি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
ভূমিকা
কলা একটি জনপ্রিয় ও পুষ্টিকর ফল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কলা উৎপাদন হয় এবং সবাই কলা খেতে পছন্দ করে। কলা এমন একটি ফল যার মধ্যে নানা ধরনের প্রাকৃতিক পুষ্টি গুনাগুন বিদ্যমান রয়েছে। যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত ভালো। কলা একটি সহজলভ্য ফল। সব দেশে সারা বছরজুড়েই কলা কিনতে পাওয়া যায়। আপনি চাইলে কলা গাছ বাড়ির আঙিনায় লাগিয়ে কলা উৎপাদন করতে পারবেন খুব সহজেই। তবে অধিকাংশ মানুষই কলার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানেনা।
যার ফলে অনেকেই প্রয়োজনমতো কলা খায় না। যদি প্রত্যেকটা মানুষ কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতো তাহলে অবশ্যই প্রতিদিন একটি করে হলেও কলা খেতো। আপনারা হয়তো অনেক জায়গাতেই কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সার্চ করেছেন। কিন্তু সঠিকভাবে কোন তথ্য খুঁজে পাননি। তাহলে আপনার চিন্তার কিছু নেই। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিতভাবে কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব।
আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়লে অবশ্যই আপনার সমস্যার সমাধান বা আপনার প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে পেয়ে যাবেন। সম্পূর্ণ বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন। কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পয়েন্ট নিচে উল্লেখ করা হলো:
কলা খাওয়ার উপকারিতা কি কি
কমবেশি আমরা সকলেই জানি কলার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক পুষ্টি গুনাগুন রয়েছে। যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত ভালো। নিয়মিত কলা খেলে আমাদের শরীরের নানা উপকার হয়। সেই সাথে কলা বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ করতেও সক্ষম। তাই আমাদের সবার উচিত প্রতিদিন ১ টি করে হলেও কলা খাওয়া। নিয়মিত কলা খেলে আমাদের শরীরের অনেক উপকার হবে। নিচে কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট আলোচনা করা হলো:
শক্তি বৃদ্ধি: কলা আমাদের শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কলাতে প্রাকৃতিক শর্করা থাকে। এই শর্করা আমাদের শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। যাদের শরীর অত্যন্ত দুর্বল লাগে এবং শরীরে তেমন শক্তি পান না তারা নিয়মিত কলা খান। কারণ নিয়মিত কলা খাওয়ার ফলে আস্তে আস্তে আপনার শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করবে। আপনার শরীর যত দুর্বলই থাক না কেন কলা খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।সেই সাথে আপনার শরীরের শক্তির মাত্রা ধীরে ধীরে অনেক বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি: নিয়মিত কলা খেলে হৃদযন্ত্র ভালো থাকে। কলার মধ্যে এক ধরনের পটাশিয়াম থাকে। যা হৃদযন্ত্রকে সুস্থ ও সবল রাখতে সাহায্য করে। শরীরে পটাশিয়ামের পরিমাণ কমে গেলে নানা ধরনের হৃদযন্ত্রের অসুখ হতে পারে। তাই আমাদের উচিত নিয়মিত কলা খাওয়া। কারণ কলার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে। আর এই পটাশিয়াম আমাদের হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য কে ভালো রাখে। অতএব আমাদের সকলেরই উচিত কলা খাওয়া।
হজম শক্তি বৃদ্ধি: কলা হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে পারে। আমাদের অনেকেরই হজম শক্তি অনেক দুর্বল হয়ে থাকে। কোন খাবার খেলেই সেটা সহজে হজম হতে চায় না। যার ফলে আমাদের পেটে অনেক সমস্যা দেখা দেয়। কলার মধ্যে অনেক পরিমাণে ফাইবার থাকে। আর এই ফাইবার হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। তাই কলা খেলে আমাদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার জমা থাকবে। যার ফলে আমাদের হজম শক্তি অনেক বৃদ্ধি পাবে। যে খাবারই খাই না কেন সেটা সহজেই হজম হয়ে যাবে। তাই হজম শক্তি বাড়াতে কলার কোন বিকল্প নেই।
ওজন কমাতে সাহায্য করে: কলা শরীরের ওজন কমায়। কলার মধ্যে কম ক্যালরি ও উচ্চমাত্রার ফাইবার থাকে। উচ্চমাত্রার ফাইবার শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে। যাদের শরীর অনেক মোটা ও ওজন অনেক বেশি। শরীরের ওজনের জন্য চলাফেরা করতে অনেক সমস্যা হয়। তারা ওজন কমাতে চাইলে নিয়মিত কলা খেতে পারেন। কারণ কলাতে থাকা উচ্চ মাত্রার ফাইবার আপনার অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করবে। শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে কলার গুরুত্ব অনেক।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: কলা খাওয়ার ফলে শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। আমরা অনেকেই জানি কলার মধ্যে পটাশিয়াম রয়েছে। পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। তাই আমাদের শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে কলা খাওয়া উচিত। কলা খেলে উচ্চ রক্তচাপ থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। সব থেকে বড় কথা কলাতে যে পটাশিয়াম থাকে তা শরীরে উচ্চ রক্তচাপ সমস্যার সৃষ্টি হতে দেয় না।পেশি শক্তি বৃদ্ধি: আমরা আগেই জেনেছি কলাতে পটাশিয়াম রয়েছে। কলাতে থাকা পটাশিয়াম পেশির সংকোচন ও শিথিলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও পেশি শক্তি বৃদ্ধি করে। পেশীকে দুর্বল হয়ে পড়তে দেয় না।
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি: কলাতে এক ধরনের ট্রিপটোফান উপাদান থাকে। যা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। এই ট্রিপটোফান উপাদান আমাদের মানসিক স্বার্থকে উন্নত করতে সাহায্য করে। যার ফলে আমাদের মেজাজ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তাছাড়াও আমাদের মন সবসময় প্রফুল্ল থাকবে।
ভিটামিন বি-৬ সরবরাহ: কলা ভিটামিন বি-৬ এর ভালো একটি উৎস। যার ফলে কলা খেলে শরীরে ভিটামিন বি-৬ এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। আমরা অনেক রকম রোগ ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকবো।
মাথাব্যথা কমাতে সহায়ক: আমাদের অনেকেরই প্রচুর পরিমাণে মাথা ব্যথা করে। আবার অনেকের মাইগ্রেনের সমস্যা রয়েছে। কলাতে থাকা পটাশিয়াম মাইগ্রেনের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। নিয়মিত কলা খেলে মাইগ্রেনের সমস্যা প্রতিরোধ বা নিরাময় করা যায়। সেই সাথে মাথাব্যথা ও রোধ করা যায়। তাই মাথাব্যথা কমাতে কলা খাওয়া উচিত।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ: কলাতে থাকা ফাইবার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে। শরীরে কোলেস্টেরল এর পরিমাণ বৃদ্ধি হতে দেয় না। শরীরকে লো-কোলেস্টেরল রাখে।
দৃষ্টিশক্তির উন্নতি: কলার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে। ভিটামিন এ চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে এবং চোখের স্বার্থের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তাই নিয়মিত কলা খেলে চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও আমাদের চোখ ভালো থাকবে, চোখে কোনরকম রোগব্যাধি হবে না।
কিডনির স্বাস্থ্য: কলা কিডনি ভালো রাখতে সহায়তা করে। কারণ কলাতে থাকা পটাশিয়াম কিডনির জন্য অনেক উপকারী। পটাশিয়াম কিডনির কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখে। কলা খেলে কিডনি অনেক ভালো থাকবে। কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্রম অনেক বৃদ্ধি পাবে।
অনিদ্রা কমানো: কলার মধ্যে থাকা ট্রিপটোফান ঘুম বৃদ্ধি করে। যাদের অনিদ্রা সমস্যা রয়েছে বা সহজেই ঘুম ধরতে চায় না চায়না। তারা নিয়মিত কলা খেলে অনিদ্রা সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে।ট্রিপটোফান শরীরের ঘুমের মাত্রা কে স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ত্বকের স্বাস্থ্য: কলাতে ভিটামিন সি থাকে। যা আমাদের ত্বককে ভালো রাখে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে,ত্বকের মধ্যে কোনরকম ক্ষতি হতে দেয় না। আমাদের ত্বকের স্বাস্থ্যকে উন্নত করে। তাই ত্বক ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে নিয়মিত কলা খাওয়া উচিত।
হাড়ের শক্তি: আমাদের হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। কলাতে ম্যাঙ্গানিজ থাকে। যা হাড়ের শক্তি অনেক বৃদ্ধি করে। আমাদের হাড়কে মজবুত ও অনেক শক্তিশালী করে তোলে। সুতরাং হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করতে কলা খাওয়ার কোন বিকল্প নেই।
কলার বিভিন্ন জাত সমূহ
কলা অত্যন্ত জনপ্রিয় সুস্বাদু একটি ফল। কলা বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। আমরা অনেকেই ভাবি কলা তো শুধুমাত্র একটি ফল। কিন্তু আমরা জানি না এই কলার মধ্যেই অনেক রকমের প্রকারভেদ রয়েছে। অর্থাৎ কলা অনেক ধরনের বা অনেক জাতের হয়ে থাকে। তাই নিচে কলার বিভিন্ন জাত সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:
সবরি কলা: এটি একটি বারোমাসি ফল। সারা বছরজুড়েই সবরি কলা পাওয়া যায়। কলার বিভিন্ন জাতের মধ্যে সবরি কলাই সবার কাছে অধিক প্রিয়।সবরি কলার স্বাদ অন্যান কলার তুলনায় অনেক বেশি হয়ে থাকে। তাই সবাই সবরি কলা খেতে বেশি পছন্দ করে।সবরি কলা কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যায় না।সবরি কলা যখন গাছে পরিপক্ক হয়ে ওঠে এবং পুরো কলার রং হলুদ বর্ণের হয়ে যায় তখনই সবরি কলা খাওয়া যায়।
অন্যান্য জাতের কলার তুলনায় সবরি কলার চাহিদা ও দাম অনেকাংশেই বেশি হয়ে থাকে।সবরি কলা আমাদের শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখতে সহায়তা করে।সবরি কলা অনেক বড় বড় ও মোটা মোটা আকৃতির হয়ে থাকে। বাজারে সবরি কলা অধিক দামে বিক্রি হলেও সবার পছন্দের তালিকায় এটিই শীর্ষে রয়েছে।
সাগর কলা: সাগর কলাও একটি বারোমাসি ফল। বছরের সব সময়ই কমবেশি সাগর কলা পাওয়া যায়। কিন্তু সাগর কলার পুষ্টিগুণ ও চাহিদা অনেক কম হয়ে থাকে। সাগর কলা,সবরি কলার মত অত জনপ্রিয় ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হয় না। সাগর কলার টেস্ট সবরি কলার মত অতটা সুস্বাদু নয়। তাই অনেকেই সাগর কলা খেতে পছন্দ করে না।সাগর কলা অনেক লম্বা লম্বা হয়ে থাকে। এবং এটি অনেক লম্বা হওয়ার কারণে মাথার দিকের অংশটা হালকা বেঁকে থাকে ।
সাগর কলা পাকা অবস্থাতেও সবুজ বর্ণের হয়ে থাকে। সাগর কলা গাছে পরিপক্ক হয়ে যাওয়ার পরেও তার রং সবুজই থেকে যায়। রংয়ের কোন পরিবর্তন খুব একটা ঘটে না ।তাই বাজারে যখন সাগর কলা কিনতে পাওয়া যায় তখনো সেটা সবুজ রঙেরই হয়ে থাকে ।অনেকেই সাগর কলার সবুজ রং দেখে ভুল করে ভেবে থাকেন এটা হয়তো রান্না করে খাওয়া যায় এমন কলা ।তবে সত্যি কথা হলো এটা আসলেই একটি পাকা কলা। যা সবরি কলার মতই এমনি খাওয়া যায়।
চাপাকলা: চাপা কলা খুবই জনপ্রিয় একটি কলা ।চাপা কলা খেতে খুবই সুস্বাদু। চাপা কলা আকারে অনেকটাই ছোট হয়ে থাকে। অনেকটা দেখতে সবরি কলার মত। তবে আকারে তার তুলনায় অনেকটাই ছোট হয়ে থাকে। এবং চাপা কলার মাথার দিকে হালকা ত্রিভুজের মতো হয়ে থাকে ।চাপা কলা গাছে পাকার আগে সবুজ রঙের হয়ে থাকে।
তবে যখন পরিপক্ক হয়ে যায় তখন উজ্জ্বল হলুদ রঙের হয়ে যায়। চাপা কলা টেস্টের দিক দিয়ে হালকা টক মিষ্টি ও সুঘ্রাণযুক্ত হয়। চাপা কলার খোসা পাতলা প্রকৃতির হয়। চাপা কলার জনপ্রিয় আরেকটি নাম হচ্ছে চাম্পা কলা। বেশিরভাগ মানুষ চাপা কলাকে চাম্পা কলা নামেই চিনে থাকে।
কাঁচকলা :কলার আরেকটি জনপ্রিয় জাতের নাম হল কাঁচ কলা ।এই কলা সাগর কলার মতোই অনেক লম্বা লম্বা হয়ে থাকে। তবে কাঁচ কলা এমনি এমনি খাওয়া যায় না। কাঁচকলা সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া হয়। কাঁচকলা খুবই পরিচিত একটি সবজি। কাঁচকলার মধ্যে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে।
তাই কাঁচকলা কে সবজি হিসেবে খেতে কমবেশি সবাই পছন্দ করে থাকেন ।তবে অন্যান্য জাতের কলার মত কাঁচকলা পাকা অবস্থায় খাওয়া যায় না। অবশ্যই কাঁচকলা সবুজ থাকা অবস্থায় সবজি হিসেবে রান্না করে খেতে হবে।
বিচি কলা: কলার বিভিন্ন জাতের মধ্যে বিচি কলা একটি পরিচিত জাত ।অন্যান্য জাতের কলার তুলনায় বিচি কলা সব থেকে বড় ও ওজনে ভারী হয়ে থাকে। সকল জাতের কলার চাইতে বিচি কলা অধিক পরিমাণে মিষ্টি। কিন্তু এই কলার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে বিচি থাকে। বিচি থাকার জন্যই এই কলার নামকরণ করা হয়েছে বিচি কলা হিসেবে। বিচি থাকাই এই কলার প্রধান বৈশিষ্ট্য। এজন্য সহজেই সবাই বিচি কলা চিনতে পারে।
কলার মধ্যে বিচি থাকার কারণে বেশিরভাগ মানুষই বিচি কলা খেতে পছন্দ করে না। বিচি কলা অনেক মোটা আকৃতির হয়ে থাকে। তবে গ্রাম অঞ্চলের মানুষ বিচি কলা খেতে অনেক পছন্দ করে। গ্রামের প্রায় প্রতিটা বাড়িতেই বিচি কলার গাছ পাওয়া যায়।
কলার পুষ্টি ও স্বাস্থ্য উপকারিতা
কলা অত্যন্ত সুস্বাদু ও অতি পরিচিত একটি ফল। কলা খেতে পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। কলার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান রয়েছে। কলা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য নানা দিক থেকে উপকারী। কলা খেলে বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আমাদের শরীরে বৃদ্ধি পায়। কলার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে। যেমন: পটাশিয়াম, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি-৬, ম্যাঙ্গানিজ, এনটিঅক্সিডেন্ট । এই সকল পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ করে।
সেই সাথে আমাদের শরীরকে সুস্থ সবল রাখে। কলা আমাদের হাটকে ভালো রাখে। শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমতে দেয় না। যাদের সহজে ঘুম ধরে না তারা চাইলে নিয়মিত কলা খেতে পারেন। কারণ কলা নিদ্রাহীনতা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কলা এনার্জির অত্যন্ত ভালো উৎস হিসেবে পরিচিত। কলা খেলে শরীরে এনার্জির পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পায়। এর কারণে অনেক খেলোয়াড়কেই বেশি বেশি পরিমাণে কলা খেতে দেখা যায়।
এছাড়াও কলার মধ্যে রয়েছে অ্যামাইনো এসিড। অ্যামাইনো এসিড আমাদের বিষন্নতা দূর করতে কাজ করে। অযথা আমাদের মস্তিষ্ককে বিষাদগ্রস্থ হতে দেয় না। কলার আরো অনেক পুষ্টি ও স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো প্রতিদিন একটি করে কলা খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। কলার মধ্যে অনেক পরিমাণে আয়রন থাকে। যা আমাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয় এবং রোগীর রক্তস্বল্পতা ও অ্যানিমিয়া রোগ প্রতিরোধ করে ।
তাছাড়া কলা মানব দেহের হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে। একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য কলা খাওয়া খুবই উপকারী। কেননা কলা নারীর স্বাভাবিক দুর্বলতা দূর করতে সাহায্য করে। সেই সাথে রক্তের সামঞ্জস্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যা একজন অন্তঃসত্তা নারী ও তার অনাগত সন্তানের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী ।কলা আমাদের পাকস্থলির এসিডকে নিয়ন্ত্রণ করতেও সক্ষম। প্রতিদিন সকালে একটি করে কলা খেলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে সেটি দূর হবে।
কলা যেহেতু একটি সহজলভ্য ফল তাই আমাদের সবারই উচিত কলা বেশি বেশি পরিমাণে খাওয়া। কলার মধ্যে আরো রয়েছে ক্যালসিয়াম এবং লৌহ ।যা আমাদের স্বার্থের জন্য অত্যন্ত পুষ্টিকর ও উপকারী। পরিশেষে একটি কথাই বলা যায় বলার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের যে পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য সবদিক থেকেই অত্যন্ত উপকারী ।
ওষুধ হিসেবে কলার ব্যবহার
বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবেও কলা এবং কলার খোসা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অনেকের মুখেই অতিরিক্ত কালো দাগ দেখা যায়। মুখের এই কালো দাগ দূর করতে কলার খোসা খুবই কার্যকর। কলার খোসা ব্লেন্ডারে পেস্ট করে নিয়ে সেই পেস্ট মুখের উপরে লাগিয়ে নিলে মুখের কালো দাগ দূর হয়ে যাবে। তবে এটি একদিন পর পরই নিয়ম করে মুখে লাগাতে হবে। তাহলে আস্তে আস্তে মুখের কালো দাগ চিরতরে দূর হয়ে যাবে। কলা সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে আমাদের ত্বককে সুরক্ষা দেয়।
তার জন্য আমাদেরকে কলার পেস্ট তৈরি করে পুরো মুখের উপরে লাগাতে হবে। তারপর 10 থেকে 12 মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। তারপর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে সপ্তাহে অন্তত দুইদিন কলার পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগালে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে আমাদের স্কিন রক্ষা পাবে । এছাড়াও কলাকে দাদের মহা ঔষধ বলা হয়ে থাকে। যাদের দাদের সমস্যা রয়েছে তারা কলার খোসা সহ পেস্ট করে নিয়ে দাদের উপরে লাগালে সহজেই দাদ নিরাময় করা যাবে।
যাদের স্কিন মসৃণ প্রকৃতির হয়ে থাকে তারা চাইলে নিয়মিত কলার পেস্ট ত্বকে লাগাতে পারেন তাহলে ত্বকের মসৃণতা আস্তে আস্তে দূর হয়ে যাবে। অনেকেরই শরীরে খোসপাঁচড়া হয়। এই খোসপাঁচড়া নিরাময়ে কলার গুরুত্ব অপরিসীম। কলার খোসা ছাড়িয়ে পেস্ট করে নিয়ে সেই পেস্ট খোস-পাঁচড়া যেখানে হয়েছে সেই স্থানে নিয়ম করে কয়েকবার লাগালে খোসপাঁচড়া থেকে রেহাই মিলবে ।
তাহলে বুঝতেই পারছেন ওষুধ হিসেবেও কলার ব্যবহার অনস্বীকার্য। কলা ও কলার খোসা সরাসরি বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তবে অবশ্যই আপনার ত্বক কোন প্রকৃতির সেটা বুঝে ও পর্যবেক্ষণ করে সর্তকতার সাথে ব্যবহার করতে হবে।
অতিরিক্ত কলা খাওয়ার অপকারিতা কি কি
আমরা সকলেই জানি অতিরিক্ত যে কোন কিছুই আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। পরিমাণের অধিক কোন কিছুই আমাদের শরীর স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে পারে না। যার ফলে আমাদের শরীরের অনেক ক্ষতি হয়। কলা অত্যন্ত সহজলভ্য একটি ফল। কলা খেতে সুস্বাদু হওয়ায় ছোট-বড় সবাই কলা খেতে ভীষণ পছন্দ করে থাকে। তবে চিন্তার বিষয় হলো যারা অতিরিক্ত কলা খান তাদের উপকারের তুলনায় শরীরের অনেক ধরনের ক্ষতি হতে পারে।
অতিরিক্ত কলা খাওয়ার ফলে আমাদের শরীর বিভিন্ন রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অতিরিক্ত কলা খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের যে ক্ষতিগুলো হতে পারে সেগুলো পয়েন্ট আকারে নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:
কোষ্ঠকাঠিন্য: বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলেন অতিরিক্ত কলা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত পরিমাণে কলা খেলে শরীরে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে আমাদের শরীরের অনেক সমস্যা হয়। আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। অতএব অতিরিক্ত কলা খাওয়ার প্রভাবে আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্যর রোগ হতে পারে।
মাইগ্রেনের সমস্যা: অতিরিক্ত কলা খেলে মাইগ্রেনের সমস্যা হয়। এছাড়া যাদের অল্প পরিমাণে মাইগ্রেনের সমস্যা রয়েছে তারা যদি অতিরিক্ত পরিমাণে কলা খান তাহলে মাইগ্রেন কয়েকগুণ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। কারণ কলার মধ্যে থাকা উচ্চমাত্রার ফাইবার মাইগ্রেনের সমস্যার সৃষ্টি করে।
শর্করার মাত্রা: কলাতে প্রচুর পরিমাণে ফ্রকটোজ থাকে। এই ফ্রকটোজ আমাদের শরীরের রক্তের মধ্যে শর্করার মাত্রা অনেক পরিমাণে বাড়িয়ে দেয়। যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর। রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গেলে শরীরের স্বাভাবিক রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। যার প্রভাবে হার্ট-অ্যাটাক এর মত সমস্যা হতে পারে। তাই অতিরিক্ত কলা খেলে আমাদের রক্তে শর্করার মাত্রা দিন দিন বাড়তেই থাকবে।
দাঁতের সমস্যা: কলার মধ্যে অনেক পরিমাণে সুগার ও কার্বোহাইড্রেট থাকে। তাই অতিরিক্ত কলা খেলে আমাদের দাঁতের সমস্যা হয়। এছাড়াও অতিরিক্ত কলা খাওয়ার ফলে দাঁতের গোড়া দিয়ে রক্তপাত হতে পারে।
ওজন বাড়ে: প্রতিদিন অতিরিক্ত পরিমাণে কলা খেলে খুব দ্রুত ওজন বৃদ্ধি পেতে থাকে। কারণ কলার মধ্যে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-৬, পটাশিয়াম, ফাইবার সহ অনেক পুষ্টিকর উপাদান থাকে। এ সকল পুষ্টিকর উপাদান আমাদের ওজন বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। তাই অতিরিক্ত কলা খাওয়ার প্রভাবে শরীরের ওজন বৃদ্ধি পায়।
পেটের সমস্যা: অতিরিক্ত কলা খেলে পেটের সমস্যা হয়। কলার মধ্যে উচ্চমাত্রার ফাইবার থাকে। যার কারণে প্রতিদিন অতিরিক্ত কলা খাওয়ার ফলে পেটে গ্যাসের সমস্যার সৃষ্টি হয়। যা থেকে পেটের নানান ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।
ব্লাড সুগার বাড়ায়: কলাতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স এর পরিমাণ অনেক উপরে থাকে। তাছাড়াও কলাতে শর্করার মাত্রা অনেক পরিমাণে থাকে। যা আমাদের ব্লাড সুগার বাড়াতে সহায়তা করে। যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদেরকে চিকিৎসকেরা কলা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলেন। অতিরিক্ত কলা খেলে শরীরের ব্লাড সুগার বৃদ্ধি পেতে থাকে।
লেখক এর মন্তব্য
প্রিয় পাঠক বৃন্দ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা কলা খাওয়ার বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পারলেন। এছাড়াও কলার মধ্যে কি কি পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা সম্পর্কেও আমরা তথ্যবহুল আলোচনা করেছি। সেই সাথে অতিরিক্ত কলা খাওয়ার বেশ কিছু অপকারিতা সম্পর্কেও বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করছি আপনি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ে কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
আপনি যদি এমন আরো শিক্ষণীয় ও তথ্য মূলক আর্টিকেল পড়তে চান তাহলে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন। আমরা প্রতিনিয়ত এমন শিক্ষণীয় ও তথ্য মূলক আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি। ধন্যবাদ আপনাকে আপনার মূল্যবান সময় ব্যয় করে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য। আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিতজনদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।
আসিফ টেক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url