টাইগার মুরগি পালনের সহজ পদ্ধতি বিস্তারিতভাবে জেনে নিন

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ আপনারা হয়তো টাইগার মুরগি পালন করতে চাচ্ছেন। কিন্তু বিভিন্ন ওয়েবসাইটে খোঁজাখুজি করেও টাইগার মুরগি পালনের পদ্ধতি সম্পর্কে সঠিকভাবে কোন তথ্য পাচ্ছেন না। তাহলে আপনার আর চিন্তার কোন কারণ নেই আজকে আমরা টাইগার মুরগী পালন সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।
টাইগার মুরগি পালনের সহজ পদ্ধতি
এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিতভাবে টাইগার মুরগি পালনের পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আপনি যদি টাইগার মুরগি পালন করতে চান তাহলে অবশ্যই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

পোস্ট সূচিপত্র: টাইগার মুরগি পালনের সহজ পদ্ধতি বিস্তারিতভাবে জেনে নিন

ভূমিকা

মুরগি পালন খুবই সহজ ও লাভজনক একটি ব্যবসা। অল্প টাকা বিনিয়োগ করে স্বল্প সময়ে অনেক টাকা লাভ করা যায়। তাই অনেক মানুষই মুরগি পালনে আগ্রহী হয়ে থাকে। যেহেতু মুরগি খুব সহজেই পালন করা যায় তাই সবার পছন্দের তালিকায় মুরগি পালন সবার প্রথমে থাকে। গ্রামের এমন কোন বাড়ি খুঁজে পাওয়া যাবে না যে বাড়িতে মুরগি পালন করা হয় না। গ্রামের প্রায় সব বাড়িতেই মুরগি পালন করা হয়। মুরগি পালন একদিকে যেমন লাভজনক।অন্যদিকে আবার মুরগি পালন করে সেই মুরগির ডিম ও মাংস পরিবারের সদস্যদের আমিষের চাহিদা পূরণ করতেও সক্ষম। 

তাহলে বুঝতেই পারছেন মুরগি পালন করা কতটা লাভজনক। টাকা উপার্জন করার পাশাপাশি পরিবারের খাদ্যের চাহিদা অনেকাংশে পূরণ করার সম্ভব হয় এই মুরগি পালন করার মাধ্যমে। তবে মুরগি পালন করার ক্ষেত্রে সবাই একই জাতের মুরগি পালন করে থাকে এমনটা নয়।সবাই তার পছন্দ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন জাতের মুরগি পালন করে। তাই আজকে আমরা জানব কিভাবে টাইগার মুরগি খুব সহজে পালন করা যায়। কারণ অল্প টাকায় খুব সহজেই টাইগার মুরগি পালনের পদ্ধতি সম্পর্কে জানা থাকলে খুব তাড়াতাড়ি লাভবান হওয়া যাবে। 

এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানবো টাইগার মুরগি পালনের পদ্ধতি,টাইগার মুরগির বাচ্চার দাম, টাইগার মুরগির খাদ্য তালিকা, টাইগার মুরগি চেনার উপায়সহ এমন আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট নিয়ে নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি টাইগার মুরগী পালন করে সফলতা পেতে চান তাহলে সম্পূর্ণ বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়বেন।

টাইগার মুরগির বাচ্চার দাম

টাইগার মুরগি পালনের ক্ষেত্রে সর্ব প্রথমে টাইগার মুরগির বাচ্চা সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকতে হবে। কোন বয়সের বা কতদিনের বাচ্চা পালন করে খুব তাড়াতাড়ি সফলতা পাওয়া যাবে সেই সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরী। বর্তমান বাজারে বিভিন্ন বয়সের টাইগার মুরগির বাচ্চা কিনতে পাওয়া যায়। তবে সব বয়সের বাচ্চা সবার জন্য লাভজনক হয় না। তাই আপনি কোন ধরনের বা কতদিনের বাচ্চা কিনে পালন করবেন সেটা নির্ভর করবে সম্পূর্ণ আপনার উপরে।আপনি যদি সঠিকভাবে টাইগার মুরগির বাচ্চা পালন করতে পারেন তাহলে বাচ্চার বয়স কোন বিষয় নয়।

যেকোনো বয়সের বাচ্চা পালন করেই আপনি সফলতার মুখ দেখতে পাবেন। আপনি আপনার সামর্থ্য ও সুবিধা অনুযায়ী বাচ্চা কিনবেন। টাইগার মুরগি পালনের আগে আপনাকে অবশ্যই বাজার থেকে টাইগার মুরগির বাচ্চা কিনতে হবে। আপনি যদি বাচ্চা কিনতে গিয়ে ঠকে যান বা অধিক দাম দিয়ে বাচ্চা কিনেন তাহলে সেগুলো লালন পালন করে খুব একটা বেশি লাভ করতে পারবেন না। তাই বাচ্চা কেনার সময় দামের দিকটা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। কত টাকা দিয়ে বাচ্চা কিনলে আপনি বেশি লাভবান হতে পারবেন সে বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।

তবে মনে রাখবেন বেশি লাভ করতে গিয়ে আবার অসুস্থ ও দুর্বল প্রকৃতির বাচ্চা কম টাকায় কিনে আনবেন না। তাহলে আপনার লাভের তুলনায় ক্ষতি বেশি হবে। এমনকি মুরগির বাচ্চা অল্প দিনেই মারা যেতে পারে। এছাড়াও মুরগির বাচ্চা বেঁচে থাকলেও মুরগির গঠন ঠিকমতো হবে না। ওজনে কম হবে, দুর্বল ও রোগগ্রস্ত হবে।তাই মুরগির বাচ্চা কেনার সময় সঠিক বাচ্চা নির্বাচন করায় উচিত। আপনাদের কথা চিন্তা করে নিচে টাইগার মুরগির বাচ্চার বয়স অনুযায়ী দাম উল্লেখ করা হলো:
  • ১ দিনের বাচ্চার দাম ৪০ থেকে ৬০ টাকা
  • ৭ দিন বয়সী বাচ্চার দাম ৬০ থেকে ৮০ টাকা
  • ১৫ দিন বয়সী বাচ্চার দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকা
  • ১ মাস বয়সী বাচ্চার দাম ১০০ থেকে ১২০ টাকা
  • ১.৫ মাস বয়সী বাচ্চার দাম ১২০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা
  • ২ মাস বয়সী বাচ্চার দাম ১৪০ থেকে ১৭০ টাকা
উল্লেখ্য: স্থান ও বাজারের ভিত্তিতে টাইগার মুরগির বাচ্চার দাম কিছুটা কম-বেশি হতে পারে। কারণ সকল জিনিসের দামই প্রতিনিয়ত ওঠানামা করে।

টাইগার মুরগি কত দিনে ডিম পাড়ে

টাইগার মুরগি যারা পালন করে থাকেন তাদের মধ্যে বেশিরভাগই টাইগার মুরগি লালন-পালন করেন ডিমের আশায়। কিন্তু দেখা যায় অনেকদিন ধরে লালন-পালন করার পরেও মুরগি ডিম দেয় না। এমন সমস্যায় অনেকেই পড়ে থাকেন। কারণ বেশিরভাগ মানুষই জানে না যে,টাইগার মুরগি ঠিক কতদিন পরে ডিম দেওয়া শুরু করে। টাইগার মুরগি সাধারণভাবে সাড়ে তিন মাস থেকে চার মাস বয়সে ডিম দেওয়া আরম্ভ করে।মুরগির ডিম দেওয়ার এটিই হল স্বাভাবিক সময়সীমা। আবার অন্যদিকে টাইগার মুরগি ঠিক কতদিন পরে ডিম পারা শুরু করবে সেটা অনেকাংশেই নির্ভর করে। 

আপনার সঠিকভাবে মুরগির পরিচর্যা ও লালন-পালনের উপর ভিত্তি করে। আপনি যদি মুরগিকে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার দেন সেই সাথে মুরগির সঠিকভাবে পরিচর্যা ও লালন-পালন করেন তাহলে টাইগার মুরগি খুব দ্রুতই ডিম দেওয়া শুরু করে।আপনি মুরগি পালন করার সময় যদি ঠিকমতো মুরগির যত্ন না করেন তাহলে মুরগির ডিম দিতে স্বাভাবিক সময়সীমা থেকেও অনেক দেরি হতে পারে। তবে সঠিক নিয়ম অনুসরণ করে মুরগি পালন করলে টাইগার মুরগি স্বাভাবিকভাবে ১১০ থেকে ১৩০ দিনে ডিম দেওয়া শুরু করে।
টাইগার মুরগি পালনের সহজ পদ্ধতি বিস্তারিতভাবে জেনে নিন
অতএব আপনি যদি সঠিক পদ্ধতি ও নিয়ম মেনে টাইগার মুরগি পালন করেন তাহলে খুব দ্রুতই স্বাভাবিক সময়ের মধ্যেই টাইগার মুরগী ডিম দেওয়া শুরু করবে এবং আপনি সফলতার মুখ দেখতে পাবেন। আশা করছি আপনি বুঝতে পেরেছেন টাইগার মুরগি ঠিক কত দিনে ডিম পাড়ে।

টাইগার মুরগি চেনার উপায়

অনেকেই ভাবেন টাইগার মুরগী কিভাবে চিনব। টাইগার মুরগি চেনার জন্য অনেকগুলো উপায় রয়েছে। বেশকিছু বৈশিষ্ট্য দেখেই আপনি টাইগার মুরগিকে খুব সহজেই চিনতে পারবেন। আপনারা যে সকল বৈশিষ্ট্যগুলো দেখে টাইগার মুরগিকে চিনবেন সেগুলো সম্পর্কে এখন আপনাদেরকে বিস্তারিতভাবে জানাবো। নিচে পয়েন্ট আকারে উল্লেখ করা হলো:

শরীরের লোম: শরীরের লোম দেখেই টাইগার মুরগীকে চিনতে পারা যায়। এই মুরগির শরীরের লোম কয়েক ধরনের হলেও সাধারণভাবে কালো, সাদা ও লাল বর্ণের সবথেকে বেশি হয়ে থাকে এবং লোমে বাঘের মত ডোরাকাটা দাগ দেখা যায়। কিছু কিছু সময় টাইগার মুরগির শরীরের লোম চার কালারের হয়। এই রং দেখেও খুব সহজেই টাইগার মুরগিকে চেনা যায়।

ওজন: অন্যান্য জাতের মুরগির তুলনায় টাইগার মুরগির ওজন অনেকাংশেই বেশি হয়। এই ওজন দেখেই টাইগার মুরগিকে সনাক্ত করা যায়। কারণ অন্যান্য জাতের যে সকল দেশি মুরগি, পোল্টি মুরগি ও লেয়ার মুরগি রয়েছে তাদের স্বাভাবিক ওজন কখনোই টাইগার মুরগির মত হয় না। টাইগার মুরগির ওজন স্বাভাবিকভাবেই ১১ থেকে ১৪ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। যা অন্যান্য মুরগির তুলনায় অনেকটাই বেশি। সেজন্য ওজন দেখেই টাইগার মুরগি চেনা যায়।

পেশীবহুল: টাইগার মুরগি দেখতে অনেক পেশীবহুল হয়ে থাকে। এই মুরগীর শরীর অন্যান্য মুরগির তুলনায় অনেক বেশি পেশীবহুল। টাইগার মুরগির শরীরে অনেক পরিমানে চর্বি ও মাংস থাকে। যা দেখে টাইগার মুরগি চেনা যায়।

শরীরের গঠন: টাইগার মুরগির শরীরের গঠন দেখেও সহজেই চেনা যায়। এই মুরগির পা বেশ লম্বা ও মোটা প্রকৃতির হয়। এছাড়াও টাইগার মুরগির পেছনের লেজ অন্য মুরগির তুলনায় অনেক বড় হয়ে থাকে। টাইগার মুরগির মাথার উপরে যে টয়া থাকে সেটা অনেক বড় ও উঁচু হয়ে থাকে। যা অন্যান্য মুরগির ক্ষেত্রে অনেকটাই ছোট আকারের হয়ে থাকে। তাই টাইগার মুরগির শরীরের এই গঠনগুলো দেখেই খুব সহজে চিনতে পারা যায়।

সহজেই টাইগার মুরগি পালন পদ্ধতি

আপনি যদি টাইগার মুরগি পালন করার পদ্ধতি সম্পর্কে সঠিকভাবে জেনে থাকেন তাহলে খুব সহজেই টাইগার মুরগি পালন করতে পারবেন। টাইগার মুরগি কম রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যান্য মুরগির তুলনায় সব থেকে বেশি। বর্তমান বাজারে টাইগার মুরগির চাহিদা অনেক বেশি এবং টাইগার মুরগি অনেক দ্রুত বড় হতে পারে।টাইগার মুরগি পালন করতে চাইলে আপনাদের একসাথে বেশি পরিমাণে মুরগি পালন করা প্রয়োজন। 
সহজেই টাইগার মুরগি পালন পদ্ধতি
কারণ অল্প কয়েকটা টাইগার মুরগি পালন করলে আপনার লাভের তুলনায় বরং ক্ষতিই বেশি হবে। আপনি তেমন লাভবান হতে পারবেন না। সেজন্যই আপনাদের একসাথে অনেক সংখ্যক টাইগার মুরগি পালন করা উচিত।টাইগার মুরগি অন্যান্য মুরগির তুলনায় খাবার একটু বেশিই খেয়ে থাকে। এই মুরগি খুব দ্রুত বেড়ে ওঠে এবং প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ দিনের মধ্যেই এক কেজি ওজনের হয়ে যায়। নিচে টাইগার মুরগি পালনের ধাপগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:

বাচ্চা নির্বাচন : টাইগার মুরগী পালনের সর্বপ্রথম ধাপ হলো সঠিক প্রকৃতির উন্নত মানের বাচ্চা নির্বাচন করা। কারণ উন্নত মানের বাচ্চা কিনতে না পারলে টাইগার মুরগি পালন করে তেমন লাভবান হওয়া যাবে না এবং মুরগির বাচ্চা গুলো বিভিন্ন রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়বে। এছাড়াও বাচ্চা কেনার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে বাচ্চাগুলো যেন সুস্থ ও সবল হয়।

কোন রোগাক্রান্ত ও দুর্বল প্রকৃতির বাচ্চা কখনোই কেনা যাবে না। বাচ্চা কেনার সময় অবশ্যই দেখে শুনে ভালো মানের টাইগার মুরগির বাচ্চা কিনতে হবে। মুরগির বাচ্চা যদি সুস্থ সবল হয় তাহলে সেগুলোকে খুব সহজেই লালন-পালন করে বড় করা যাবে। সেই সাথে মুরগিও কম রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হবে।তাছাড়াও মুরগির বাচ্চা মারা যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কম থাকবে।অনেকেই টাইগার মুরগি পালনের জন্য বাচ্চা কিনতে গিয়ে ভুল করে থাকেন। 

কম টাকায় বেশি লাভের আশায় খুবই সাশ্রয় মূল্যে দুর্বল ও রোগাক্রান্ত বাচ্চা কিনে নিয়ে চলে আসে। যার মাশুল তাকে পরবর্তীতে দিতে হয়।মুরগির বাচ্চা গুলো একের পর এক মারা যেতে শুরু করে কোন কারণ ছাড়াই। তখন লাভের তুলনায় সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়তে হয়। তাই কম টাকায় মুরগির বাচ্চা কিনে বেশি লাভ করার আশায় কখনোই দুর্বল ও রোগগ্রস্ত বাচ্চা কেনা যাবে না। অবশ্যই উন্নত মানের সুস্থ ও সবল প্রকৃতির বাচ্চা কিনতে হবে।

মুরগির ঘর তৈরি: টাইগার মুরগি পালনের দ্বিতীয় ধাপ হলো মুরগির থাকার জন্য যথাযথ ঘর তৈরি করা। যেখানে মুরগিগুলোকে খুব ভালোভাবে লালন পালন করা যাবে।টাইগার মুরগি পালনের জন্য অবশ্যই আলো বাতাস প্রবেশ করে এমন খোলামেলা ঘর তৈরি করতে হবে। ঘরে ছাদ হিসেবে আপনি টিন বা ছনের ব্যবহার করতে পারেন।

এছাড়াও আপনি চাইলে পলিথিন দিয়েও মুরগির ঘরের ছাদ তৈরি করতে পারেন। তবে মুরগির জন্য যে ঘর বানাবেন তার দেয়াল ইট,টিন এবং কাঠ এগুলো দিয়ে পুরোপুরি ঢেকে দেয়া যাবে না। তাহলে মুরগির ঘরে পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারবে না। যার ফলে মুরগির অনেক সমস্যা হবে।মুরগির সঠিকভাবে বাড়তে পারবে না এবং বিভিন্ন রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়বে। এমনকি মুরগি মারাও যেতে পারে। 

তাই মুরগির ঘরের দেয়াল নেট দিয়ে দিতে হবে। কারণ নেট জাল খোলামেলা প্রকৃতির হয়। যার জন্য মুরগির ঘরের মধ্যে খুব সহজেই বাইরের আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারবে।যা টাইগার মুরগির জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও উপকারী। তাই আপনি যদি টাইগার মুরগী পালন করে সফলতা পেতে চান তাহলে এই নিয়ম অনুসরণ করে টাইগার মুরগি পালনের জন্য ঘর তৈরি করতে পারেন।

মুরগির খাবার :টাইগার মুরগি পালন করে সফলতা পেতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই ভালো মানের পুষ্টিকর খাবার মুরগিকে খাওয়াতে হবে। মুরগি যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। মুরগিকে নিয়ম মেনে পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহ করলে মুরগি খুব তাড়াতাড়ি বড় হয়ে উঠবে। সেই সাথে মুরগি বিভিন্ন রোগ ব্যাধিতে কম আক্রান্ত হবে। তাই অবশ্যই মুরগিকে প্রতিদিন নিয়ম মত পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। তাহলেই আপনি সফলতার মুখ দেখতে পাবেন।

মুরগির যত্ন: মুরগিকে শুধু খাবার সরবরাহ করলেই হবে না। একই সাথে মুরগির যত্ন নিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে মুরগির ঘর যেন নোংরা হয়ে না থাকে। মুরগির বিষ্ঠা ২-৩ দিন পর পরই পরিষ্কার করে দিতে হবে। মুরগি যে ঘরে থাকে সেই মেঝেতে তুষা ও কাঠের গুঁড়ো বিছিয়ে দিতে হবে। যাতে করে মুরগির ঘরে স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থার সৃষ্টি না হয়। সেই সাথে মেঝেতে বিছিয়ে দেয়া তুষা ও কাঠের গুঁড়ো ১০ থেকে ১৫ দিন পরপরই পরিবর্তন করে দিতে হবে।

না হলে মুরগি বিভিন্ন রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়বে। মুরগিকে সুস্থ সবল রাখতে চাইলে অবশ্যই নিয়মিত মুরগির যত্ন নিতে হবে। মুরগির দিকে পর্যাপ্ত খেয়াল রাখতে হবে।মুরগি কোন কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লেও সাথে সাথে কোন রেজিস্টার্ড প্রাণী চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করে পর্যাপ্ত ওষুধ খাওয়াতে হবে।

টাইগার মুরগির খাবার তালিকা

অন্যান্য জাতের মুরগির তুলনায় টাইগার মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই বেশি হয়ে থাকে। সেই সাথে টাইগার মুরগির ওজনও অন্যান্য জাতের মুরগির তুলনায় অনেক বেশি হয়। সেজন্য টাইগার মুরগির বৃদ্ধি ও পরিপূর্ণ গঠনের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার প্রতিদিন সরবরাহ করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।টাইগার মুরগিকে সাধারণ ভাবে তাদের বয়স ও ওজন অনুযায়ী পরিমাণ মতো খাবার খেতে দিতে হয়।

আপনি যদি টাইগার মুরগি পালন করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার টাইগার মুরগির খাবার তালিকা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ভাবে ধারণা থাকতে হবে। একটি টাইগার মুরগি স্বাভাবিকভাবে একদিনে ১৭০ গ্রাম থেকে ২২০ গ্রাম পর্যন্ত খাবার খায়। নিচে টাইগার মুরগির খাদ্য তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:

টাইগার মুরগির বাচ্চা জন্ম নেয়ার সাথে সাথেই তার ওজন ৩০ থেকে ৪০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে।জন্ম নেয়ার পরে তাদের শারীরিক বৃদ্ধি শূন্যের কোটায় অবস্থান করে। সেজন্য মুরগির বাচ্চাগুলোর খাদ্যের পরিমাণও এই সময়ে শুন্য হয়ে থাকে।
  • যখন বাচ্চার বয়স ১ দিন হবে সেই সময়ে মুরগির বাচ্চার ওজন অনুযায়ী খুবই সামান্য পেরু গ্রাম খাবার খেতে দিতে হবে।যা প্রায় ৮ থেকে ১০ গ্রামের কাছাকাছি ।
  • তার পরের দিনে টাইগার মুরগির ওজন যখন ৭০ গ্রাম হবে তখন টাইগার মুরগির বাচ্চাকে ১৫ গ্রাম থেকে শুরু করে ২৫ গ্রাম পর্যন্ত খাবার খেতে দিতে হবে।
  • ৩ নাম্বার দিনে টাইগার মুরগির বাচ্চার ওজন ৮৫ গ্রাম হবে তখন তাদেরকে ৪৫ গ্রাম পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করতে হবে।
  • ৪ নাম্বার দিনে টাইগার মুরগির বাচ্চার ওজন যখন ১০০ গ্রাম হবে তখন বাচ্চাগুলোকে ৭০ গ্রাম খাবার খেতে দিতে হবে।
  • ৫ নাম্বার দিনে বাচ্চার মোট ওজন ১৩০ গ্রাম হবে তখন তাদেরকে ৮০ গ্রাম খাবার সরবরাহ করতে হবে।
  • ৬ নাম্বার দিনে টাইগার মুরগির বাচ্চার ওজন ১৫০ গ্রাম হবে তখন মুরগির বাচ্চা গুলোকে ১০০ গ্রাম হারে খাবার খাওয়াতে হবে।
  • ৭ নাম্বার দিনে টাইগার মুরগির বাচ্চা গুলো তাদের বয়স অনুযায়ী ১৯৫ গ্রাম হবে তখন তাদেরকে ১৫০ গ্রাম হারে খাবার সরবরাহ করতে হবে।
  • সপ্তম দিনের পর থেকে টাইগার মুরগির বাচ্চাকে তার ওজন অনুযায়ী ১৭০ গ্রাম থেকে শুরু করে ২২০ গ্রাম পর্যন্ত খাবার প্রতিদিন নিয়ম করে খাইয়ে যেতে হবে। যতদিন পর্যন্ত আপনি টাইগার মুরগী পালন করবেন ততদিন পর্যন্তই ।

লেখক এর মন্তব্য

সম্মানিত পাঠক বৃন্দ আমাদের এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনারা টাইগার মুরগি পালনের সহজ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পারলেন।এছাড়াও আমরা এই আর্টিকেলের মধ্যে টাইগার মুরগির বাচ্চার দাম, টাইগার মুরগী চেনার উপায়, খাদ্য তালিকা সহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বিস্তারিতভাবে তথ্যবহুল আলোচনা করেছি। যা আপনারা আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে বুঝতে পেরেছেন।আপনি যদি টাইগার মুরগি পালন করে সফল হতে চান তাহলে অবশ্যই আমাদের এই পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করে টাইগার মুরগি পালন করতে পারেন। 

আশা করছি আপনি সফল হবেন। আমাদের এই দেখানো পদ্ধতিতে আপনি যদি টাইগার মুরগি পালন শুরু করেন তাহলে স্বল্প ব্যয়ে অধিক লাভ করে নিজেকে একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন।এখন সিদ্ধান্ত নিতান্তই আপনার। এমন আরো তথ্যবহুল, শিক্ষণীয় আর্টিকেল পড়তে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন। 

ধন্যবাদ আপনাকে আপনার মহামূল্যবান সময় ব্যয় করে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য। আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিতজনদের সাথে শেয়ার করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আসিফ টেক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url